শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি কাজে বাধা প্রদান করার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাধারন কৃষকদের প্ররোচিত করে কিছু অসাধু ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করেছে বলে দাবি করেছে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দেশ ও জনগণের বৃহৎ স্বার্থে “তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পূর্ণবাসন ও সম্প্রসারণ” প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বর্তমানে এর কাজ চলমানও রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বুড়ি তিস্তা নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভূ-উপরস্থ পানি কার্যকরী ব্যবহার ও সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে নদীর প্রবাহকে ঠিক রাখতে অবৈধভাবে দখলদারদের কাছ থেকে নদী উদ্ধারে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে একটি গঠন করেছিল জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী বুড়ি তিস্তা নদীর ১২১৭ একর জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বলে চিহ্নিত করেছির ওই কমিটি।
“তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পূর্ণবাসন ও সম্প্রসারণ” প্রকল্পের কাজ বুড়ি তিস্তা নদীতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জলাধার পুনঃখনন করতে গিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা স্বার্থ হাসিল করার জন্য সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে।
গত ২০২২ সালের (১৭ ডিসেম্বর) বুড়ি তিস্তা খনন কাজে জমি সার্ভে করতে গেলে তখন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় পওর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই হামলায় ২টি মোটরসাইকেল, ৩টি মেশিন ভাংচুর ও ২টি মেশিন, ১টি মোটরসাইকেল ও ১টি মাটিকাটা ভেকু আগুনে পুড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসী বাহিনীরা। ওই ঘটনার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য (নীলফামারী-০১) আফতাব উদ্দির সরকার স্থানীয়দের সাথে কয়েক দফায় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করেন।
গত ২০২৩ সালের (২৩ ফেব্রুয়ারি) নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১২১৭ একর আয়তনের বুড়িতিস্তা জলাধার পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার।
সংসদ সদস্য কর্তৃক পুনঃখনন কাজের উদ্বোধনে ৩দিন পর জলাধার পুনঃখনন করতে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এসময় আবারও অসাধু ব্যক্তি তাদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ওই ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মমিনুর রহমান খান সহ ১০ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হন। সন্ত্রাসী বাহিনীর বার বার হামলার কারণে পওর বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে সরকারি কাজে বাধা ও হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা দায়ের করেন।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বুড়ি তিস্তা নদীর ১২১৭ একর জমি মধ্যে প্রথম ধাপে ৬৬৭ একর জলাধার পুনঃখনন কাজ সম্পন্ন শুরু হওয়ার কথা ছিল। এটি বাস্তবায়িত হলে ওই এলাকার ৫ হাজার ৫০০ একর জমিতে আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে জলাধারের পানি ব্যবহার করে সেচ দিতে পারবেন। যার ফলে প্রতিবছর বুড়িতিস্তা সেচের মাধ্যমে প্রায় ২৬ হাজার টনের অধিক ফসল উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭২ কোটি টাকারও বেশি।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান জানান, আমরা চেষ্টা করেছি কোনো ধরনের মামলা মোকদ্দমায় না যেতে। এজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদেরও সহযোগিতা নিয়েছি। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তিরা তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিল করার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে হামলা, ভাঙ্গচুর, খনন কাজে ব্যবহুত বিভিন্ন যন্ত্রাদিতে আগুন লাগিয়ে বার বার কাজে বাধা প্রদান করে। যার ফলে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পওর বিভাগ সন্ত্রসীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
আতিকুর রহমান আরও বলেন, মামলার পর পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে সরকারি সম্পত্তি ভাঙ্গচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও হামলার ঘটনায় জড়িত কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা সরকারি কাজে বাধা প্রদান করবে না শর্তে আদালতের কাছ থেকে জামিন পান।
তারপরও তারা আমাদের কাজে কোনো ধরনের সহযোগিতা করছে না উল্টো নানান ভাবে কাজে বাধা প্রদানের চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে আজকে তারা অযৌক্তিক সংবাদ সম্মেলন করে। যার কোনো ভিত্তি নাই।